মিসরের লাক্সর শহরে মাটি খুঁড়তেই বেরিয়ে এল সেই রোমান শাসনামলের পুরো এক নগরী। প্রত্নতাত্ত্বিকদের ক্রমাগত প্রচেষ্টায় একটু একটু করে দৃশ্যমান হয়েছে কালের গর্ভে হারিয়ে যাওয়া এক শহরের কঙ্কাল।
১ হাজার ৮০০ বছরের এই পুরোনো রোমান শহরটি আবিষ্কার করা সহজ ছিল না। মাটির ওপর বেরিয়ে থাকা কবুতরের টাওয়ারের অগ্রভাগ দেখে প্রত্নতাত্ত্বিকরা সেখানে খননকাজ শুরু করেন গত বছরের সেপ্টেম্বরে। এর পরই বেরিয়ে আসতে থাকে শহরটির ভেঙে যাওয়া বাড়িঘর, স্কুল-কলেজের নমুনা। সেখানকার প্রায় ধ্বংসপ্রাপ্ত রাস্তাঘাট, বাসিন্দাদের ব্যবহৃত কিছু পাত্র এবং তামার ও রুপার মুদ্রা।
মিসরের পুরাকীর্তিবিষয়ক প্রতিষ্ঠানের মহাসচিব মোস্তাফা ওয়াজিরি জানান, এ শহরটি ৩০০ খ্রিষ্টাব্দ সময়কালের। সবচেয়ে পুরাতন ও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এক নগর ছিল এটি। আর যে টাওয়ারের সূত্র ধরে পুরো নগর উন্মোচিত হলো, সেগুলো কবুতরের বসার জায়গা। সেখান থেকেই কবুতরের পায়ে চিঠি বেঁধে রোমান সাম্রাজ্যের বিভিন্ন স্থানে পাঠানো হতো।
জানা যায়, রোমান সাম্রাজ্যের ব্যাপ্তি দুই হাজার বছর। সেই খ্রিষ্টপূর্ব পঞ্চম শতক থেকে শুরু হওয়া রোমান সভ্যতা সিজারদের সময় পৌঁছায় পরাক্রমের শীর্ষে এরপর কালক্রমে বহু ঘাত-প্রতিঘাতের মধ্য দিয়ে বিলীন হয়ে যায় পঞ্চদশ শতকে। এ সময় রোমান তথা বাইজান্টাইন সাম্রাজ্য সীমিত হয়ে পড়ে কনস্টান্টিনোপলে। ১৪৫৩ সালে তাদের ওপর চূড়ান্ত আঘাতটি হানেন ওসমানীয় সুলতান মুহম্মদ বিন ফতেহ। সেই সঙ্গে কনস্টান্টিনোপলের নাম পরিবর্তন করে রাখেন ইস্তানবুল। তুরস্কের এই অঞ্চলটি এখন ইস্তাম্বুল নামেই পরিচিত।
যা-ই হোক, এক কালের পরাক্রমশালী রোমানরা আজ নেই, কিন্তু রয়ে গেছে তাদের কীর্তি, রয়ে গেছে তাদের চিহ্ন। স্থানিক, কালিক এবং ঐতিহাসিকভাবে রোমান সভ্যতার বিস্তৃতি ও প্রভাব এতটাই যে এর ওপর কয়েক লাখ বই প্রকাশিত হওয়ার পরও এখনো ঐতিহাসিকদের কাছে গবেষণার অত্যন্ত প্রিয় বিষয় রোমান সভ্যতা।
লাক্সর শহরটি নীল নদের তীরে অবস্থিত। বাইজান্টাইন আমলের বিখ্যাত রাজা-রানিদের বাসস্থান ছিল এই শহরেই। ১৯৭৯ সালে শহরটি ইউনেসকোর বিশ্বঐতিহ্যবাহী স্থানের তালিকাভুক্ত হয়।
প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শনে সমৃদ্ধ এই লাক্সরে গত বছরেই বেশ কিছু প্রাচীন সমাধি আবিষ্কৃত হয়।
গত বছরের শেষ নাগাদ কায়রোতে উদ্বোধন করা হয় গ্র্যান্ড ইজিপশিয়ান মিউজিয়াম। এর আগে নতুন নতুন সব প্রাপ্তিতে যারপরনাই আনন্দিত প্রত্নতাত্ত্বিকরা। দেশটির পর্যটন ও পুরাকীর্তিবিষয়ক মন্ত্রণালয় মনে করছে, এই নতুন জাদুঘর এবং নতুন নতুন পুরাকীর্তি দেখতে দেশটিতে প্রচুর পর্যটকের সমাগম হবে এবং এর মাধ্যমেই মিসর কোভিড-১৯-এর খরা কাটিয়ে উঠতে সক্ষম হবে।