বলিউডের মিস্টার পারফেকশনিস্ট অভিনেতা আমির খান প্রযোজিত ও অভিনীত নতুন সিনেমা ‘সিতারে জমিন পার’ মুক্তি পেয়েছে গত শুক্রবার (২০ জুন)। এস প্রসন্নার পরিচালনায় এ সিনেমায় আমিরের সঙ্গে অভিনয় করেছেন বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন ১০ শিল্পী।
এর আগে ২০০৭ সালে আমির খান পরিচালিত ‘তারে জমিন পার’ সিনেমাটি তুমুল প্রশংসা পেয়েছিল। সেই সিনেমার সিকুয়েল 'সিতারে জমিন পার'। এবার তিনি পরিচালনায় নেই। কেন নেই? এর জবাবে আমির বলেন, ‘আমি তখন বাধ্য হয়েই সিনেমাটি পরিচালনা করেছিলাম। তবে নিজেকে এখনো কেবল একজন অভিনেতা ভাবি। পরিচালনায় নামলে অভিনয় ছেড়ে দিতে হবে, সেটি আমি চাই না। সম্প্রতি মুম্বাইয়ের সান্তাক্রুজে আমির খানের প্রোডাকশন হাউসে একটি গণমাধ্যমের এক সাক্ষাৎকারে সে কথা বলেন মিস্টার পারফেকশনিস্ট অভিনেতা।
সাংবাদিকের সঙ্গে এক দীর্ঘ আলাপচারিতায় নিজের কাজ, দর্শন, ব্যর্থতা ও ভালোবাসা নিয়ে অকপটে বললেন আমির খান। তিনি বলেন, আমার প্রায় ৩৫ বছরের অভিজ্ঞতায় দেখেছি, সেটে সৃজনশীল মানুষের মধ্যে ইগো, মতবিরোধ, টানাপোড়েন থাকেই। কিন্তু এই সিনেমার শুটিংয়ে সেই চিত্র একেবারে উল্টো। ওই ১০ জন বিশেষ শিল্পী সেটে পা রাখতেই যেন এক পবিত্রতা ছড়িয়ে যেত। ওদের মধ্যে কোনো অহংকার নেই, নেই গলা উঁচিয়ে কথা বলার অভ্যাস। এমনভাবে সহযোগিতা করেছে, যা আমাদেরও শিখিয়ে গেছে কীভাবে সহনশীল হতে হয়।
মিস্টার পারফেকশনিস্ট বলেন, ওদের থেকেই বেশি টেক নিতে হয়েছে আমাকে। ওরা বলত—বড় মানুষের এমন ভুল হতেই পারে। খুব সরল ছিল ওদের দৃষ্টিভঙ্গি। আমি জানি না, ওরা আমার থেকে কী শিখেছে, তবে আমি ওদের থেকে ধৈর্য আর ইতিবাচক মানসিকতা শিখেছি।
নিজের সিনেমা নির্বাচন প্রসঙ্গে আমির খান বলেন, আমি কখনো সামাজিক বার্তা দিয়ে সিনেমার বিচার করি না। আমি নিজেকে দর্শক ভাবি—যদি গল্পটা আমাকে হাসায়, কাঁদায়, হৃদয় ছুঁয়ে যায়, তবে আমি সেটির অংশ হই। তিনি বলেন, যদি বার্তা থাকে, তো ভালো। তবে আমি একজন মনোরঞ্জক, আমার দায়িত্ব আপনাদের মনোরঞ্জন করা।’
এ অভিনেতা বলেন, আর ব্যর্থতা নিয়ে আমির বরাবরই স্পষ্টবাদী। ‘লাল সিং চাড্ডা’ সিনেমার ব্যর্থতা তাকে একেবারে মানসিকভাবে ভেঙে দিয়েছিল। তিনি বলেন, ‘১৮ বছর পর এত বড় একটা ফ্লপ—আমি হতবাক হয়ে গিয়েছিলাম। মানসিক অবসাদে ছিলাম। আমার পরিবার আমাকে ধরে রেখেছে তখন। আম্মি, কিরণ, জুনাইদ, আইরা—ওদের ভালোবাসা আমাকে ফিরিয়ে এনেছে। আমি মজা করে বলি— সিনেমাটা হিট হলে হয়তো এত ভালোবাসা পেতাম না।
ব্যর্থ সিনেমা ‘থাগস অব হিন্দুস্তান’ প্রসঙ্গে আমির বলেন, ‘এ সিনেমাটি যে চলবে না, আমি আগেই বুঝেছিলাম। ভিক্টর বা আদিত্য চোপড়াকে বলেছিলাম— কিন্তু ওরা আমার কথা শোনেনি। এমনকি সিনেমা মুক্তির আগে আমি দারুণ ঘুমিয়েছিলাম। কারণ জানতাম, কী আসতে চলেছে।
শিশু ও বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন মানুষকে নিয়ে বলিউডে সিনেমা কম হয় কেন? এর উত্তরে মিস্টার পারফেকশনিস্ট বলেন, কারণ নির্মাতারা ভাবেন— এ ধরনের সিনেমার বাজার নেই। অথচ 'তারে জমিন পার', 'চিল্লার পার্টি', 'স্ট্যানলি কা ডাব্বা'-এর মতো কাজগুলোই মানুষ মনে রেখেছে।
তিনি বলেন, আমার বিশ্বাস, ভারতীয় শিশুদের নিজের গল্পে তৈরি সিনেমা দেখানো দরকার। আমাদের সমাজে রামও আছে, রাবণও। আমি চাই, আমার সিনেমা রাবণকে বিদায় দিয়ে রামকে জাগিয়ে তুলুক।
৮ ঘণ্টার কর্মঘণ্টা নিয়ে বর্তমানে বলিউডে পক্ষে-বিপক্ষে চলছে বিতর্ক। এ প্রসঙ্গে আমির বলেন, ৮ ঘণ্টা কাজ, ৮ ঘণ্টা ঘুম, ৮ ঘণ্টা নিজের জীবনের জন্য—এটাই হওয়া উচিত। আমি নিজেও একসময় ১৬-১৮ ঘণ্টা কাজ করেছি। কিন্তু অভিনয়কে কখনো কাজ মনে করিনি। ওটা আমার আবেগের জায়গা।
গৌরীকে নিয়ে আলোচনায় আমির—এমন প্রশ্নের উত্তরে মিস্টার পারফেকশনিস্ট বলেন, আমি গৌরীকে লুকিয়ে রাখতে চাইনি। যাকে ভালোবাসি, তাকে সম্মান দিয়ে সামনে আনতে চাই। আমি চরমপন্থি, আর গৌরী শান্ত। আমাদের পার্থক্যই আমাদের টানার কারণ। ও আমার জীবনে শান্তি এনেছে, আর আমি ওর জীবনে রোমাঞ্চ (হাসি)।