শনিবার, ৮ নভেম্বর ২০২৫
Logo

লিভার ভালো রাখার ১০ উপায়

Journalist Name

উত্তরভূমি বার্তাকক্ষ

প্রকাশ: ০১ নভেম্বর ২০২৫, ১১:০৪এএম

লিভার ভালো রাখার ১০ উপায়

লিভার আমাদের শরীরের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ। এটি দেহের বিভিন্ন কার্যক্রম পরিচালনায় সাহায্য করে। খাবার হজম, ভিটামিন ও মিনারেল শোষণ, বিপাক প্রক্রিয়া এবং শরীর থেকে টক্সিন বের করতেও লিভার সাহায্য করে। সে জন্য লিভারের সমস্যা হলে শরীরের অন্যান্য অঙ্গপ্রত্যঙ্গেও প্রভাব পড়ে। এর প্রাথমিক লক্ষণগুলো জানতে পারলে সময়মতো চিকিৎসা শুরু করা যায়। তাতে বড় ধরনের সমস্যা এড়ানো সহজ হয়।

ছুটির সময় অতিরিক্ত খাওয়াদাওয়ার পর লিভারকে একটু বিশ্রাম ও যতœ দেওয়া জরুরি। চিকিৎসকদের মতে, প্রতি চারজন প্রাপ্তবয়স্কের একজনের ফ্যাটি লিভার সমস্যা আছে, যা অনিয়ন্ত্রিত খাদ্যাভ্যাস ও বসে থাকার জীবনধারার কারণে বাড়ছে। সময়মতো চিকিৎসা না পেলে এটি লিভার ক্যানসার বা লিভার ফেইলিওরে রূপ নিতে পারে।

বিএসএমএমইউর রেসিডেন্ট চিকিৎসক বলেন, ‘লিভারের সমস্যা শুরু হলে শরীরে বেশ কিছু প্রাথমিক লক্ষণ দেখা দিতে পারে। যেমন—খাবার খাওয়ার পর বমি বা বমির ভাব হওয়া, অস্বাভাবিক ক্লান্তি বা অবসন্নতা অনুভব করা, পেটের ডান দিকে হালকা বা তীব্র ব্যথা থাকা ইত্যাদি। অনেক সময় ত্বক ও চোখের সাদা অংশ হলুদ হয়ে যায়, যা জন্ডিসের লক্ষণ। এ ছাড়া খাবারের প্রতি আগ্রহ কমে যাওয়া বা ক্ষুধামান্দ্য দেখা দিতে পারে। কিছু ক্ষেত্রে শরীরে পানি জমে পেট ফুলে ওঠে বা হাত-পায়ের নখে অস্বাভাবিক পরিবর্তন দেখা যায়—এসবই লিভারের সমস্যার আগাম সংকেত হতে পারে।’

লিভার ভালো রাখতে নিচের উপায়গুলো চেষ্টা করে দেখতে পারেন—

কফি পান করুন

গবেষণায় দেখা গেছে, দিনে তিন-চার কাপ কফি লিভারে দাগ বা ফাইব্রোসিসের ঝুঁকি কমায়। কফি লিভারের জন্য চায়ের চেয়ে বেশি উপকারী।

ব্রোকলি ও বাঁধাকপি খান

এই সবজি লিভারকে ফ্রি র‍েডিক্যাল ক্ষতি থেকে রক্ষা করে এবং প্রদাহ কমায়। এগুলোতে ভিটামিন ‘সি’, ফাইবার ও অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট আছে। সেদ্ধ করা খাবার লিভারের জন্য ভালো, ভাজাপোড়া নয়।

সাদা ভাত কম খান

অতিরিক্ত পরিশোধিত ভাত, চিনি, লাল মাংস ও ভাজা খাবার ফ্যাটি লিভারের ঝুঁকি বাড়ায়। তার পরিবর্তে লাল চাল, ডাল ও মসলা, যেমন—রসুন, মরিচ, ধনিয়া ও কারিপাতা ব্যবহার করুন।

পর্যাপ্ত প্রোটিন নিন

লিভার দুর্বল হলে শরীরের পেশি ক্ষয় হতে পারে। তাই প্রতিদিন ডিম, মাছ, মুরগি, ডাল বা টোফু খান। যারা নিরামিষভোজী, তারা মসুর ডাল দিয়ে প্রোটিনের ঘাটতি পূরণ করতে পারেন।

অযথা বারবার খাওয়া বন্ধ করুন

সারা দিন অল্প অল্প নাশতা খাওয়ার বদলে রাতে অন্তত ১৪ ঘণ্টা না খেয়ে থাকুন। এতে লিভার নিজেকে পরিষ্কার ও ঠিক করতে সময় পায়, যাকে বলে অটোফ্যাজি।

ভিটামিন ‘সি’ খাওয়া বাড়ান

লিভার তার কাজে প্রচুর ভিটামিন ‘সি’ ব্যবহার করে। তাই কমলা, লেবু ইত্যাদি নিয়মিত খান। ফলের রস না করে পুরো ফল খেলে ফাইবারও পাওয়া যায়, যা বিষাক্ত পদার্থ শরীর থেকে বের করতে সাহায্য করে।

খাবারের পরিমাণ ১০ শতাংশ কমান

অতিরিক্ত ক্যালরি ওজন বাড়ায়, অতিরিক্ত ওজন ফ্যাটি লিভারের মূল কারণ। দিনে দুই হাজার ক্যালরির বেশি না খাওয়ার চেষ্টা করুন এবং চিনি ও প্রক্রিয়াজাত খাবার এড়িয়ে চলুন।

অন্ত্রের ভালো ব্যাকটেরিয়া বাড়ান

লিভারের সঙ্গে অন্ত্রের গভীর সম্পর্ক আছে। রসুন, পেঁয়াজ, পুরো শস্য ও ফাইবারসমৃদ্ধ খাবার অন্ত্রের ভালো ব্যাকটেরিয়া বাড়িয়ে লিভারকে সুস্থ রাখে।

নিয়মিত ব্যায়াম করুন

প্রতিদিন অন্তত ৩০ মিনিট হাঁটা, সাইক্লিং বা সাঁতার কাটুন। এতে শরীরের চর্বি কমে, রক্ত চলাচল বাড়ে এবং লিভার আরও কার্যকরভাবে কাজ করে।

অ্যালকোহল কমান

বিয়ার বা ওয়াইন যেকোনো পানীয়তেই ক্ষতিকর উপাদান হলো অ্যালকোহল। তাই অল্প পান করুন এবং পরিমাণ জেনে নিন। লিভার আমাদের শরীরকে প্রতিদিন বিষাক্ত পদার্থ থেকে রক্ষা করে। কিন্তু একে সুস্থ রাখতে সঠিক খাবার, পর্যাপ্ত বিশ্রাম, নিয়মিত ব্যায়াম এবং অ্যালকোহল নিয়ন্ত্রণের বিকল্প নেই। এখনই যতœ নিন, যাতে লিভারও আপনাকে দীর্ঘদিন সুস্থ রাখে।

সূত্র: দ্য টেলিগ্রাফ