কিংবদন্তি কবি হেলাল হাফিজের বিখ্যাত কবিতা 'নিষিদ্ধ সম্পাদকীয়'-এর প্রথম দুই লাইন—'এখন যৌবন যার মিছিলে যাবার তার শ্রেষ্ঠ সময়/এখন যৌবন যার যুদ্ধে যাবার তার শ্রেষ্ঠ সময়।' কবি তারুণ্যের মাধ্যমে সবাইকে বোঝানোর চেষ্টা করেছেন—যৌবনকালেই শ্রেষ্ঠ সময়। তাই তারুণ্য আমাদের বড় অহংকার, বড় গৌরবের; বড় আত্মমর্যাদার এবং বড় সম্মানের। সেজন্য কবি বারবার তারুণ্যকে প্রাধান্য দিয়েছেন।
আর সেই তারুণ্যকেই ধরে রাখতে চাই। যদিও তারুণ্যকে ধরে রাখা কঠিন। তা কখনো সম্ভব নয়। কারণ সময়ের হাত ধরে আমাদের জীবনে বার্ধক্য আসবেই। একে ঠেকানো আসলেই কঠিন।
তারপরও তারুণ্যকে ধরে রাখতে আমাদের নিরন্তর চেষ্টা করে যেতে হবে। আপনার যদি সময়ের আগে মুখে বলিরেখা, শুকনো ত্বক, নিষ্প্রাণ মুখমণ্ডল দেখা যায়, তবে সেটি মেনে নেওয়া যায় না। আপনার মন খারাপ হওয়া স্বাভাবিক। আর এটি ধরে রাখতে না পারার জন্য বর্তমান লাইফস্টাইল আর্লি এজিং এর জন্য দায়ী। কাজের চাপে অনেকে জাঙ্কফুডের ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়েন। আবার রাতজাগা, সকালের নাশতা না করা, মিষ্টিজাতীয় খাবারের প্রতি আসক্তি বয়সকে দ্রুত বাড়িয়ে দেয়।
সুতরাং সুস্থ ও তারুণ্য ধরে রাখার জন্য খাদ্য নির্বাচন যতটা জরুরি, স্বাস্থ্যকর খাবার সময়মতো পরিমিত পরিমাণে খাওয়াটাও ততটাই গুরুত্বপূর্ণ। অতিরিক্ত মানসিক চাপ থাকলে খাবারের প্রবণতা বাড়ে। একে স্ট্রেস ইটিং বলে। এ চাপের ফলে কর্টিসল হরমোনের নিঃসরণ বেড়ে যায়। এ হরমোন উচ্চরক্তচাপ, দুর্বল হজমশক্তি ও ওজন বৃদ্ধির জন্য অনেকটাই দায়ী। আর স্ট্রেস হরমোন থেকে মিষ্টি, নোনতা এবং উচ্চ ক্যালোরিসম্পন্ন খাবারের প্রতি আশক্তি তৈরি হয়। এতে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হিসাবে বিভিন্ন ধরনের অসুস্থতা এবং চেহারায় বয়স বেড়ে যাওয়ার ছাপ পড়ে যায়।
চলুন জেনে নেওয়া যাক, কীভাবে তারুণ্য ধরে রাখবেন—
১. ফাস্টফুড
আপনি অতিরিক্ত ফাস্টফুড থেকে বিরত থাকুন। কারণ আপনার চেহারায় খুব তাড়াতাড়ি বয়সের ছাপ ফেলে দেবে। আর ফাস্টফুডে ট্রান্স ফ্যাট বেশি থাকে। ডুবো তেলে ভাজা খাবারে ট্রান্স ফ্যাট আরও বেশি থাকে। এ ধরনের খাবারে ফ্রি রেডিক্যাল বাড়িয়ে দিয়ে দ্রুত কোষের ক্ষয় হতে থাকে। সেজন্য বাইরে গেলে খেতে পারেন স্যান্ডউইচ, সালাদ, নুডলস।
২ ব্রেকফাস্ট
সকালে নাশতা না করলে মেটাবলিজম প্রক্রিয়া পূর্ণ উদ্যমে কাজ করতে পারে না। ফলে ক্যালোরি ক্ষয়ও হয় ধীরগতিতে। আর সকালে ব্রেকফাস্ট না করলে দুপুরের খাবারের সময় অনেক বেশি খিদে লাগে। তখন প্রয়োজনের তুলনায় বেশি খাওয়া হয়। সেজন্য সকালে হাতে সময় বেশি না থাকলে খেতে পারেন দুধ, কর্নফ্লেক্স বা ওটস, দুধ-টোস্ট বিস্কুট, চিড়া, কলা বা দুধ।
সারা দিনে বিরতি দিয়ে ৫-৬ বার খাবার খাওয়া উচিত। দীর্ঘক্ষণ না খেয়ে থাকা ঠিক নয়। এতে খিদের পরিমাণ বেড়ে যায় বলে কোনো বেলাতেই পরিমাণ ঠিক রেখে খাওয়া যায় না। সকালের নাশতা ও দুপুরের খাবারের মাঝখানে ফল খাওয়া যেতে পারে। এদিকে বিকালে হালকা হেলদি স্ন্যাকস খেলে ভালো হয়। যেমন-স্যুপ, স্যান্ডউইস, মুড়ি, চিড়া, টোস্ট, বাদাম ইত্যাদি। আমাদের দেশের প্রেক্ষাপট অনুযায়ী রাত ৯টার মধ্যে রাতের খাবার শেষ করা যেতে পারে। কখনোই বেশি রাত করে খাওয়া উচিত নয়। এতে হজমের গোলমাল হওয়ার আশঙ্কা থাকে।
৩. চিনি ও মিষ্টি
মিষ্টিজাতীয় খাবার অনেকেরই পছন্দ। মিষ্টি দেখলেই যেন পাগল হয়ে যান। মিষ্টি খাওয়া বন্ধ পারলে ভালো হয়। যেখানে সরাসরি চিনি ব্যবহার করা হয়, সেখানে মধু, ফলের রস ব্যবহার করে খেতে পারেন। তবে মিষ্টি না খাওয়াই ভালো। আর অতিরিক্ত মিষ্টিজাতীয় খাবার ত্বকের নানা রকম ক্ষতি করে থাকে।
বিশেষ করে সাদা চিনিতে গ্লাইকোসাইলেশন দেখা দেয়। ফলে ত্বকের স্বাভাবিক ক্ষয় মেরামত প্রক্রিয়া ব্যাহত হয়। আবার ত্বকের জন্য প্রয়োজনীয় প্রোটিন, ইলস্টিন ও কোলাজেন ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এতে ত্বকে বলিরেখা ও ভাঁজ দেখা দেয়। সেজন্য চিনি যতটা সম্ভব এড়িয়ে চলা উচিত।
৪. শর্করা
আমাদের সারা দিনের খাবারে শর্করা বা কার্বোহাইড্রেট পরিমাণে বেশি থাকে। যেমন— ভাত, রুটি, চিড়া, মুড়ি, লুচি, পরোটা, বার্গার, বিস্কুট ইত্যাদি। এ শর্করা প্রয়োজনের তুলনায় বেশি খেলেই চর্বিতে রূপান্তরিত হয়। এ জন্য এ ধরনের খাবার চাহিদামতো খাওয়া উচিত।