উত্তরভূমি বার্তাকক্ষ প্রকাশিত: ০৭ নভেম্বর, ২০২৫, ০৫:৫১ এএম

রান্নার অত্যন্ত অত্যাবশ্যকীয় একটি উপাদান হচ্ছে হলুদ। আর্য়ুবেদে এটিকে ওষুধ হিসেবে গণ্য করা হয়। সকালে খালি পেটে এক টুকরা কাঁচা হলুদ খেলে অনেক রকম রোগ থেকে মুক্তি পাওয়া যায় বলে ধারণা অনেকের। তাই অনেকেই প্রতিদিন সকালে কিংবা উপকারের কথা ভেবে রান্নাতেও বেশি হলুদ ব্যবহার করেন।
অনেকে আবার প্রতিদিন হলুদের সাপ্লিমেন্টও খান। কিন্তু জানেন কি, এই হলুদই অতিরিক্ত মাত্রায় খেলে শরীরের ক্ষতি হতে পারে? ডায়েটে মাত্রাতিরিক্ত হলুদ রাখলে শরীরে কী প্রভাব পড়তে পারে, চলুন জেনে নেওয়া যাক।
হলুদের মধ্যে থাকা অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি ও অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট উপাদান শরীরের জন্য উপকারী। তবে অতিরিক্ত খেলে এটি শরীরের ক্ষতি করতে পারে।
বিশেষত, হলুদের কারকিউমিন কিডনির ওপর প্রভাব ফেলতে পারে। বিশেষ করে হলুদের সাপ্লিমেন্ট বেশি খেলে কিডনির ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে।
অতিরিক্ত হলুদ গ্রহণ কিডনিতে অক্সালেট জমার প্রবণতা বাড়াতে পারে। এটি কিডনির জন্য ক্ষতিকর হতে পারে।
বিশেষ করে যাদের কিডনিতে পাথরের সমস্যা আছে, তাদের হলুদ খাওয়ার মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করা উচিত। অতিরিক্ত হলুদ কিডনির ওপর চাপ সৃষ্টি করতে পারে।
হলুদ সেবনে কিডনিতে পাথর হওয়ার আশঙ্কা বেড়ে যায়। যাদের পরিবারে কিডনিতে পাথর হওয়ার ইতিহাস আছে, তাদের ক্ষেত্রে এই আশঙ্কা আরো বেশি। হলুদ ওজন কমাতে কার্যকর।
তাই ওজন বাড়াতে চাইলে ডায়েটে হলুদ কম রাখুন।
বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ, যাদের কিডনির সমস্যা আছে, তারা স্বল্প পরিমাণে হলুদ খেতে পারেন। ক্যালসিয়াম সমৃদ্ধ খাবার ও সবুজ শাক-সবজির সঙ্গে হলুদ খেলে অক্সালেটের প্রভাব কমতে পারে। তাই চিকিৎসকদের মতে, প্রতিদিন হলুদ খেলেও অতিরিক্ত খাওয়া একেবারেই উচিত নয়।
অতিরিক্ত মাত্রায় হলুদের সাপ্লিমেন্ট গ্রহণ করলে লিভারের কার্যক্ষমতা ব্যাহত হতে পারে। এ রকম হলে ক্ষুধামান্দ্য ও শারীরিক দুর্বলতা দেখা দেয়। চোখ, ত্বক ও প্রস্রাব হলুদ হয়ে যায়। লিভারের মারাত্মক ক্ষতি হয়ে গেলে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়ার প্রয়োজন হতে পারে।
অতিরিক্ত হলুদ গ্রহণ করলে রক্তের সুগার কমে যেতে পারে। এর কারণে বুক ধড়ফড় করা, ঘাম হওয়া ও শরীর কাঁপার মতো সমস্যা দেখা দিতে পারে। সুগারের মাত্রা অতিরিক্ত কমে গেলে জ্ঞানও হারাতে পারেন।
হলুদ থেকে অনেকের অ্যালার্জি হয়। তাই বেশি হলুদ খেলে ত্বকে সংক্রমণ, পেট ব্যথাসহ একাধিক সমস্যা হতে পারে। পেটের গণ্ডগোল, গা বমি ভাব, ডায়রিয়াসহ একাধিক সমস্যার কারণও হতে পারে অতিরিক্ত হলুদ খাওয়া।
ক্যান্সার নিরাময়ে হলুদ যেমন সাহায্য করে, ঠিক তেমনি অ্যান্টিক্যান্সারের কিছু ওষুধ আছে, হলুদ সেবনের ফলে যেগুলোর কার্যকারিতা কমে যায়। হলুদ রক্ত জমাট বাঁধার স্বাভাবিক প্রবণতা কমায়। ফলে ২ সপ্তাহের মধ্যে যারা অপারেশন করবেন, হলুদ গ্রহণের ফলে অপারেশনে তাদের অধিক রক্তপাত হওয়ার আশঙ্কা থাকে। একই কারণে যারা রক্ত পাতলা করার ওষুধ খান, তাদেরও কাঁচা হলুদ খাওয়া উচিত নয়।
কতটা হলুদ খাবেন
বিশেষজ্ঞদের মতে, কাঁচা হলুদ দিনে ৫ থেকে ১০ গ্রামের বেশি খাওয়া উচিত নয়। অতিরিক্ত খেলে শরীরে বিষক্রিয়া হতে পারে। একাধিক গবেষণায় এও বলা হয়েছে, দৈনিক ডায়েটে ৫০০-১০,০০০ মিলিগ্রাম হলুদই যথেষ্ট। আয়ুর্বেদ অনুযায়ী, যাদের পিত্তদোষ আছে, তারা এই মসলা এড়িয়ে চলুন। কারণ হলুদ শরীরকে গরম করে তোলে।
সূত্র: আজকাল