শুক্রবার, ৭ নভেম্বর ২০২৫
Logo
logo

দুধ থেকে বৈচিত্র্যময় খাবার


উত্তরভূমি বার্তাকক্ষ প্রকাশিত:  ০৭ নভেম্বর, ২০২৫, ১২:২১ এএম

দুধ থেকে বৈচিত্র্যময় খাবার

শিশু থেকে বৃদ্ধ– সব বয়সী মানুষের পছন্দের খাবার দুধ। সরাসরি পান করার পাশাপাশি দুধ থেকে তৈরি হয় অনেক ধরনের দুগ্ধজাত খাবার, যা শুধু স্বাদের বৈচিত্র্যই আনে না; বরং পুষ্টির ঘাটতি পূরণে রাখে বড় ভূমিকা। বাংলাদেশের সংস্কৃতি, অর্থনীতি ও রান্নার ঐতিহ্যে দুধ এবং দুধজাত খাবারের অবদান তাই অপরিসীম।

পূজা-পার্বণ কিংবা ঈদের দিন দুধ ছাড়া মিষ্টি বা খাওয়ার আয়োজন কল্পনাই করা যায় না। পায়েস চাল, দুধ, চিনি ও ঘি মিশে যে স্বাদ তৈরি করে, তা জন্মদিন থেকে শুরু করে শিশুর অন্নপ্রাশন– সব বিশেষ দিনে অপরিহার্য। ঘন দুধে চিনি ও চাল বা সেমাই দিয়ে রান্না করা খির বাংলার প্রতিটি গ্রামে জনপ্রিয় মিষ্টান্ন।

ঢাকার মিষ্টান্ন প্রস্তুতকারক কাদের মিয়া বলেন, ‘দুধ ছাড়া ছানা হয় না, আর ছানা ছাড়া মিষ্টির জগৎই অচল। রসগোল্লা, রসমালাই, সন্দেশ, কালোজাম– সবই দুধের অবদান।

বগুড়া, নওগাঁ কিংবা পাবনার মিষ্টি দই দেশের সীমানা পেরিয়ে আন্তর্জাতিকভাবেও সমাদৃত। চায়ের কাপে দুধ মেশানো এখন দৈনন্দিন অভ্যাস। পাশাপাশি তরুণদের কাছে কফি, হট চকলেট, লাচ্ছি, ফালুদা কিংবা বিভিন্ন ধরনের মিল্কশেক বিশেষ জনপ্রিয়। গ্রীষ্মে দুধ দিয়ে তৈরি আইসক্রিম শিশু থেকে বড় সবার পছন্দের তালিকায় শীর্ষে। 

রান্নায় দুধের ব্যবহার

রান্নার স্বাদ বাড়াতেও দুধের ব্যবহার বহুল প্রচলিত। কোরমা, বিরিয়ানি বা বিশেষ কোনো তরকারি রান্নায় দুধ বা দই মেশালে ঝোল ঘন হয়, বাড়ে স্বাদ। অন্যদিকে দুধ থেকে তৈরি পনির এখন শহুরে খাবারের তালিকায় নিয়মিত সংযোজন। পনিরের তরকারি, পনির-সবজি কিংবা পনির স্যান্ডউইচ তরুণদের কাছে বিশেষ আকর্ষণীয়। ডেজার্ট তালিকায় কাস্টার্ড, পুডিং, কেক– সবই দুধ ছাড়া অসম্পূর্ণ। 

পুষ্টিগুণের ভান্ডার

পুষ্টিবিদদের মতে, দুধ একটি সম্পূর্ণ খাদ্য। এতে রয়েছে উচ্চমাত্রার ক্যালসিয়াম, ভিটামিন ডি ও বি১২, ফসফরাস, প্রোটিন এবং মিনারেলস। পুষ্টিবিদ ডা. রাশেদা আক্তার বলেন, ‘দুধ হাড় ও দাঁত মজবুত করতে সাহায্য করে। শিশুদের বৃদ্ধি, অন্তঃসত্ত্বা নারীদের স্বাস্থ্য এবং বয়স্কদের পুষ্টির জন্য দুধ অপরিহার্য।’

বাংলাদেশে প্রতিদিন মাথাপিছু দুধ গ্রহণের হার এখনও প্রয়োজনীয় মানদণ্ডের নিচে। খাদ্য ও কৃষি সংস্থার (এফএও) তথ্যমতে, একজন মানুষের দৈনিক গড়ে ২৫০ মিলিলিটার দুধ খাওয়া প্রয়োজন হলেও বাংলাদেশে এ হার ১০৫ থেকে ১৬০ মিলিলিটারের মধ্যে সীমাবদ্ধ।

দুধশিল্পের অর্থনীতি

দুধ শুধু খাবার নয়, অর্থনীতির এক গুরুত্বপূর্ণ খাত। সরকারি প্রতিষ্ঠান মিল্ক ভিটা থেকে শুরু করে প্রাণ, আড়ং, ইম্পেরিয়াল– বিভিন্ন কোম্পানি দুধ প্রক্রিয়াজাত করে তৈরি করছে গুঁড়া দুধ, দই, মাখন, ঘি, পনির, আইসক্রিমসহ অসংখ্য পণ্য।

বাংলাদেশ দুগ্ধ উৎপাদক সমিতির তথ্য অনুযায়ী, দেশে বর্তমানে প্রায় ৫০ লাখ মানুষ প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে দুধ ও দুগ্ধজাত শিল্পের সঙ্গে যুক্ত। এর মধ্যে গরু পালনকারী কৃষক, দুগ্ধ সংগ্রহকারী, পরিবহনকারী, প্রসেসিং কারখানা ও বিপণনকারী রয়েছেন। 

চ্যালেঞ্জও কম নয়

দুধ ও দুগ্ধজাত পণ্য উৎপাদনে নানা চ্যালেঞ্জ রয়েছে। খাদ্য নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞদের মতে, অনেক সময় খামার থেকে সংগ্রহ করা দুধে ভেজাল মেশানো হয়।

বাংলাদেশ স্ট্যান্ডার্ডস অ্যান্ড টেস্টিং ইনস্টিটিউশন (বিএসটিআই) এক জরিপে দেখেছে, দেশে বাজারজাত তরল দুধের প্রায় ২০ শতাংশে মান বজায় থাকে না। পুষ্টিবিদরা বলছেন, দুধের বিশুদ্ধতা নিশ্চিত করা গেলে এটি সাধারণ মানুষের জন্য সাশ্রয়ী এবং নিরাপদ পুষ্টির বড় উৎস হতে পারে। 

ভোক্তার প্রত্যাশা

ঢাকার গৃহিণী নাজনীন সুলতানা বলেন, ‘আমার ছেলেমেয়েদের প্রতিদিন দুধ খাওয়াই। তবে বাজারের দুধে ভেজালের খবর শুনে আতঙ্কিত থাকি। আমরা চাই নিরাপদ দুধ।’ পুষ্টিবিদরা বলছেন, ভেজালমুক্ত ও সহজলভ্য দুধ নিশ্চিত করতে পারলে শিশুদের পুষ্টিহীনতা কমানো, কৃষকের আয় বৃদ্ধি এবং দেশের অর্থনীতিকে আরও সমৃদ্ধ করা সম্ভব হবে।