শনিবার, ৮ নভেম্বর ২০২৫
Logo
logo

কফিতে লবণ মেশালে কী হতে পারে


উত্তরভূমি বার্তাকক্ষ প্রকাশিত:  ০৭ নভেম্বর, ২০২৫, ১২:৫০ পিএম

কফিতে লবণ মেশালে কী হতে পারে

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রায় সময় দেখা যায়, কফির তেতো ভাব কমাতে অনেক ইনফ্লুয়েন্সার লবণ মেশানোর পরামর্শ দেন। কফির আসল স্বাদ আরো বাড়াতে নাকি এক চিমটে লবণই যথেষ্ট। টিকটক থেকে ইনস্টাগ্রাম, সর্বত্রই এই নতুন ‘ফুড হ্যাক’ নিয়ে চলছে বিস্তর আলোচনা।

কিন্তু পুষ্টিবিদ ও চিকিৎসকরা এই নতুন ট্রেন্ডে বিপদ দেখছেন।

তাদের মতে, স্বাদ সামান্য বাড়াতে গিয়ে অজান্তেই ডেকে আনা হচ্ছে মারাত্মক স্বাস্থ্যসমস্যা। এই অভ্যাস নিয়মিত চলতে থাকলে রক্তচাপ থেকে শুরু করে স্ট্রোক ও হার্ট অ্যাটাকের আশঙ্কা বহুগুণ বেড়ে যেতে পারে।

কফিতে লবণ দেওয়ার প্রথা অবশ্য নতুন নয়। কিছু দেশে, বিশেষত ভিয়েতনাম ও তাইওয়ানে ‘সল্টেড কফি’ বেশ জনপ্রিয়।

লবণ বা সোডিয়াম ক্লোরাইড কফির তিক্ত ভাব কমাতে সাহায্য করে এবং মিষ্টি স্বাদকে বাড়িয়ে তোলে।

বিশেষত, যদি কফি বড্ড বেশি ভাজা, ডার্ক রোস্ট বা নিম্নমানের হয়, তবে তার কড়া ভাব কাটাতে লবণ কার্যকর। এই তত্ত্বকেই হাতিয়ার করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ইনফ্লুয়েন্সাররা একে নতুন ‘ট্রেন্ড’ হিসেবে জনপ্রিয় করে তুলেছেন।

বিশেষজ্ঞরা জানাচ্ছেন, সমস্যাটা এক চিমটে লবণে নয়, বরং অভ্যাসে।

চিকিৎসকদের মতে, আধুনিক খাদ্যাভ্যাসে এমনিতেই আমাদের শরীরে প্রয়োজনের তুলনায় অনেক বেশি সোডিয়াম প্রবেশ করে।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সুপারিশ অনুযায়ী, একজন সুস্থ প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের দৈনিক ৫ গ্রামের বেশি লবণ বা প্রায় ২০০০ মিলিগ্রাম সোডিয়াম খাওয়া উচিত নয়। কিন্তু বাস্তব চিত্রটা ভিন্ন। চিপস, সস, আচার, পিৎজা, বার্গার, চিজ, প্রক্রিয়াজাত মাংস, সসেজ, সালামি থেকে শুরু করে সাধারণ পাউরুটি বা বিস্কুট—সব কিছুতেই লুকিয়ে থাকে প্রচুর পরিমাণে লবণ।

অধিকাংশ মানুষই লবণের নির্ধারিত সীমা পার করে ফেলেন নিজের অজান্তেই।

এর ওপর যদি নতুন করে কফিতে লবণ খাওয়ার অভ্যাস যুক্ত হয়, তাহলে বিপদ আরো বেড়ে যেতে পারে। অনেকেই দিনে ৩ থেকে ৪ কাপ কফি খান। প্রতি কাপে এক চিমটি লবণ, মানে দৈনিক সোডিয়াম গ্রহণের মাত্রা আরো অনেকটাই বেড়ে যাওয়া।

লবণ-কফিতে কী বিপদ

বিশেষজ্ঞরা একাধিক গুরুতর সমস্যার কথা উল্লেখ করছেন।

উচ্চ রক্তচাপ ও হৃদরোগ

শরীরে সোডিয়ামের মাত্রা বাড়লে তা কোষ থেকে পানি টেনে নেয় এবং রক্তে পানির পরিমাণ বাড়িয়ে দেয়। একে ‘ওয়াটার রিটেনশন’ বা শরীরে পানি জমা বলে। এর ফলে ব্লাড ভলিউম বাড়ে। এই অতিরিক্ত রক্ত পাম্প করতে হৃদযন্ত্রকে বেশি পরিশ্রম করতে হয়, তাতে ধমনীর গায়ে তীব্র চাপ পড়ে। ফলস্বরূপ, উচ্চ রক্তচাপ দেখা দেয়। আর এটি হার্ট অ্যাটাক ও ব্রেন স্ট্রোকের ঝুঁকি বহুগুণে বাড়িয়ে দেয়।

কিডনির ওপর মারাত্মক চাপ

কিডনিকে বলা হয় শরীরের ‘ছাঁকনি’। রক্ত থেকে এই অতিরিক্ত সোডিয়াম ছেঁকে বের করার কঠিন কাজটি কিডনিকেই করতে হয়। দীর্ঘদিন ধরে কিডনির ওপর এই অতিরিক্ত চাপ পড়লে তার কার্যক্ষমতা কমতে শুরু করে। বিশেষত, যাদের আগে থেকেই কিডনির সমস্যা রয়েছে, তাদের জন্য এই অভ্যাস বিষ পানের সমান।

পানিশূন্যতা

কফি নিজে একটি ‘ডাইইউরেটিক’ পানীয়, অর্থাৎ এটি খেলে শরীর থেকে পানি ও খনিজ লবণ বের হয়ে যায়, ঘনঘন প্রস্রাব পায়। এর সঙ্গে লবণ যুক্ত হলে তা শরীর থেকে আরো পানি টেনে নেয়। ফলে কফি খেয়ে তেষ্টা মেটানোর পরিবর্তে উল্টো পানিশূন্যতা বা ডিহাইড্রেশনের মতো সমস্যা দেখা দিতে পারে।

ফোলা ভাব ও ইডিমা

শরীরে অতিরিক্ত পানি জমার (ওয়াটার রিটেনশন) ফলে মুখ, হাত, পা ফুলে যাওয়ার মতো সমস্যা দেখা দিতে পারে, যাকে ‘ইডিমা’ বলা হয়।

চিকিৎসকরা হুঁশিয়ারি দিয়ে বলছেন, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে জনপ্রিয় হওয়া সব ট্রেন্ডই স্বাস্থ্যকর নয়। স্বাদ সামান্য ভালো করার জন্য হার্ট বা কিডনির মতো গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গকে বাজি রাখা বুদ্ধিমানের কাজ নয়। বিশেষত, যারা ইতিমধ্যেই উচ্চ রক্তচাপ, হৃদরোগ বা কিডনির সমস্যায় ভুগছেন, তাদের এই ট্রেন্ড থেকে দূরে থাকাই বাঞ্ছনীয়।