শনিবার, ৮ নভেম্বর ২০২৫
Logo
logo

মুখের ভেতর ছত্রাকের সংক্রমণ কেন হয়, লক্ষণ ও চিকিৎসা কী


উত্তরভূমি বার্তাকক্ষ প্রকাশিত:  ০৮ নভেম্বর, ২০২৫, ০৩:৪৮ এএম

মুখের ভেতর ছত্রাকের সংক্রমণ কেন হয়, লক্ষণ ও চিকিৎসা কী

আমাদের মুখগহ্বরে থাকে অসংখ্য অণুজীব। এর কিছু উপকারী আবার কিছু নির্দিষ্ট পরিবেশ–পরিস্থিতিতে হতে পারে ক্ষতির কারণ। ক্যানডিডা অ্যালবিক্যানস নামের একধরনের ছত্রাক আমাদের মুখ ও খাদ্যনালিতে সুপ্ত অবস্থায় থাকে।

মুখগহ্বরের পরিবেশগত ভারসাম্য নষ্ট হলে এই ছত্রাকের সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়ে জিব, মাড়ি, তালু বা ঠোঁটে সাদা ক্ষত ও জ্বালাপোড়া সৃষ্টি করে। একে বলে ওরাল ক্যান্ডিডিয়াসিস।

কেন হয়, কাদের হয়

সাধারণত যাঁদের রোগ প্রতিরোধক্ষমতা কম, তাঁরা খুব সহজেই এই রোগে আক্রান্ত হন। এইচআইভি বা এইডস, ক্যানসার বা কেমোথেরাপি ও রেডিওথেরাপি গ্রহণকারী রোগী, শিশু ও প্রবীণেরা বেশি ঝুঁকিতে থাকেন।

দীর্ঘমেয়াদি অ্যান্টিবায়োটিক সেবনে উপকারী জীবাণু মারা যায় যা ছত্রাক বৃদ্ধিতে অনুকূল পরিবেশ তৈরি করে। অনিয়ন্ত্রিত ডায়াবেটিস মুখের লালায় চিনির মাত্রা বাড়িয়ে ছত্রাক বৃদ্ধিকে ত্বরান্বিত করে। কৃত্রিম দাঁত নিয়মিত পরিষ্কার না করলেও সংক্রমণ হতে পারে। তামাক সেবন ও ধূমপানের ফলে অতি দ্রুত ছত্রাক সংক্রমণ বাড়ে।

অ্যাজমা ও ফুসফুসের রোগে ভোগা রোগীদের নিয়মিত করটিকোস্টেরয়েড ইনহেলার ব্যবহার করতে হয়। এটি ছত্রাক সংক্রমণের জন্য আদর্শ পরিবেশ তৈরি করে। এ ছাড়া লালাগ্রন্থির রোগ, নিয়মিত দাঁত ও জিব পরিষ্কার না করা হতে পারে ছত্রাক বৃদ্ধির কারণ।

লক্ষণ ও উপসর্গ

জিব ও গালের ভেতরের অংশে, ঠোঁট ও তালুতে সাদা ক্রিম বা দুধের মতো ব্যথাযুক্ত আস্তরণ দেখা যায় যা ঘষলে লাল ক্ষতের সৃষ্টি হয়।

ঝাল ও মসলাজাতীয় খাবারে জ্বালাপোড়া অনুভূত হয়।

মাড়িতে সাদা সাদা দাগ দেখা যায়।

খাবার গিলতে কষ্ট হয় এবং স্বাদ পাওয়া যায় না।

মুখের ভেতর লালা শুকিয়ে আঠালো অবস্থা তৈরি হয় এবং রুচি নষ্ট হয়।

অনেক সময় ঠোঁটের কোণে ব্যথাযুক্ত ফাটল দেখা যায়।

কারও কারও ক্ষেত্রে জ্বর থাকে।

চিকিৎসা ও প্রতিরোধ

সাধারণত অ্যান্টিফাঙ্গাল ওষুধের মাধ্যমে এ রোগের চিকিৎসা করা হয়। পাশাপাশি কিছু ভিটামিন সাপ্লিমেন্টও দেওয়া হয়। এই রোগ সারাতে অ্যান্টিবায়োটিকের কোনো ভূমিকা নেই। রোগের তীব্রতার ওপর চিকিৎসার সময়কাল ও ওষুধের ডোজ নির্ভর করে। এ সময় ভাজাপোড়া, তেল–মসলা ও ঝালজাতীয় খাবার এড়িয়ে চলতে হবে।

এই রোগ প্রতিরোধে নিয়মিত দাঁত ও জিব পরিষ্কার করতে হবে। কৃত্রিম দাঁত থাকলে তার সঠিক পরিচর্যা এবং ঘুমের আগে খুলে রাখতে হবে। চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া অ্যান্টিবায়োটিক সেবন করা যাবে না। ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে।

পর্যাপ্ত পরিমাণ পানি পান করতে হবে এবং ভিটামিন সি–জাতীয় ফল খেতে হবে। ইনহেলার ব্যবহারের পর প্রতিবার পানি দিয়ে কুলকুচি করতে হবে এবং ইনহেলার পরিষ্কার রাখতে হবে। চিনিযুক্ত খাবার, ধূমপান ও অ্যালকোহল এড়িয়ে চলুন। অতিমাত্রায় মাউথ ওয়াশের ব্যবহার কমাতে হবে।