উত্তরভূমি বার্তাকক্ষ প্রকাশিত: ০৮ নভেম্বর, ২০২৫, ০১:৪১ এএম

হোম মেড বা ঘরে তৈরি সৌন্দর্যচর্চার পণ্যের প্রতি মানুষের আকর্ষণ বাড়ছে ক্রমাগত। আমাদের রান্নার কাজে ব্যবহার করা বহু উপাদান দিয়ে রূপচর্চা করা যায়। সে চর্চার ধারাও বেশ পুরোনো আমাদের দেশে। তবে সেসব পণ্য দিয়ে রূপচর্চার উপকরণ তৈরির আগে জানতে হবে কোন উপাদান কোন ধরনের ত্বক প্রভাবিত করতে পারে।
বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিয়ে তারপর ঘরে বানানো সৌন্দর্যচর্চার পণ্যগুলো ব্যবহার করা নিরাপদ। তা না হলে সমস্যা হওয়াটা খুবই স্বাভাবিক। রান্নাঘরের এমন কিছু উপাদান আছে, যেগুলো আমাদের ত্বক বিভিন্নভাবে প্রভাবিত করতে পারে। কারও তেলতেলে ত্বক, আবার কারও শুষ্ক ত্বক। অনেককে ব্রণ বা সংবেদনশীলতার মতো সমস্যাও মোকাবিলা করতে হয়। তাই ত্বক পরিচর্যার চেষ্টা করার আগে আপনার ত্বকের ধরন জানা গুরুত্বপূর্ণ।
যে উপাদানগুলো ত্বক প্রভাবিত করতে পারে
সাইট্রাস ফল: সাইট্রাস অর্থাৎ টকজাতীয় ফল ত্বক উজ্জ্বল করতে সহায়তা করে। তবে এর কিছু নেতিবাচক দিকও আছে। চর্মরোগ বিশেষজ্ঞ ও হেয়ার ট্রান্সপ্লান্ট সার্জন ড. বি এল জংগিদ বলেছেন, ‘এগুলোতে উচ্চমাত্রায় অ্যাসিডিটি থাকে। এগুলো আপনার ত্বক সূর্যের আলোর প্রতি আরও সংবেদনশীল করে তুলতে পারে।’ এই সংবেদনশীলতা কাঙ্ক্ষিত স্বাস্থ্যকর উজ্জ্বলতার বদলে সানবার্ন ঘটাতে পারে।
হলুদ: হলুদ প্রদাহবিরোধী বৈশিষ্ট্যের জন্য পরিচিত। এটি ত্বক আরও উজ্জ্বল দেখাতে সাহায্য করতে পারে। তবে কারও কারও ক্ষেত্রে হলুদে অ্যালার্জি থাকতে পারে।
দই: দইয়ে ল্যাকটিক অ্যাসিড থাকে, যা মৃদু এক্সফোলিয়েশনে সাহায্য করে। এটি অনেকের কাছেই আকর্ষণীয় উপকরণ। তবে এটি ব্যবহারের ক্ষেত্রে সতর্ক থাকত হবে। দই সংবেদনশীল ত্বকের জন্য উপযুক্ত নাও হতে পারে এবং জ্বালা বা ব্রেকআউট সৃষ্টি করতে পারে।
স্ক্রাব: একটি ভালো স্ক্রাব ত্বকের জন্য অনেক উপকারী। কফি ও চিনির স্ক্রাব অনেক জনপ্রিয়। তবে সংবেদনশীল ত্বকে এই উপাদানগুলো ছোট ছোট ফাটল সৃষ্টি করতে পারে। তাই পরীক্ষা না করে এই ধরনের স্ক্রাব নিয়মিত ব্যবহার করা এড়িয়ে চলা উচিত।
ত্বকের জন্য ভালো ঘরোয়া উপাদান
অ্যালোভেরা জেল: এই রসালো উদ্ভিদ হালকা হাইড্রেশন সরবরাহ করে। এটি ত্বকে আর্দ্রতা দেয়। বিশেষত যাদের গুরুতর ত্বকের সমস্যা নেই তাদের জন্য এটি খুবই ভালো একটি উপাদান। তবে ব্যবহারের আগে বুঝে নিতে হবে এতে ত্বকে অ্যালার্জির সৃষ্টি হচ্ছে কি না।
উপটান: ছোলা, ময়দা ও মসলার এই মিশ্রণ মৃদু স্ক্রাব হিসেবে কাজ করে। এটি বাড়িতে স্পা করার জন্য দারুণ।
ডিমের মাস্ক: এটি অস্থায়ীভাবে ত্বক টান টান করতে পারে। কোনো গুরুত্বপূর্ণ অনুষ্ঠানের আগে দ্রুত সতেজতার জন্য দুর্দান্ত উপাদান হতে পারে ডিমের মাস্ক।
ত্বকের জন্য ৭ স্বাস্থ্যকর অভ্যাস
ত্বক হাইড্রেটেড রাখুন: পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান করা স্বাস্থ্যকর ত্বক বজায় রাখার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এটি স্থিতিস্থাপকতা ও সতেজ চেহারা বজায় রাখতে সহায়তা করে।
হালকা ক্লিনজার ব্যবহার করুন: প্রতিদিন হালকা ক্লিনজার দিয়ে ত্বক ধুয়ে নিলে এর প্রাকৃতিক তেল না সরিয়ে পরিষ্কার থাকবে। একটি কার্যকরী ক্লিনজিং রুটিন তৈরি করুন বিশেষজ্ঞের পরামর্শে। ক্লান্তি বা ঘামের পর, সকালে ঘুম থেকে উঠে এবং ঠিক ঘুমানোর আগে মুখ ধোয়া সাধারণত স্বাস্থ্যকর ত্বকের জন্য আদর্শ সময়।
সানস্ক্রিন ব্যবহার করুন: সানস্ক্রিন শুধু সমুদ্রসৈকতে যাওয়ার জন্যই নয়, এটি স্কিনকেয়ারের জন্য অপরিহার্য; যা সূর্যের ক্ষতিকর রশ্মি থেকে ত্বক রক্ষা করে।
ধোঁয়া থেকে দূরে থাকুন: যেকোনো ধরনের ধোঁয়া এড়িয়ে চলুন। ত্বক যখন সিগারেটের ধোঁয়ার সামনে আসে, তখন মুখে সব ধরনের রাসায়নিক বিষাক্ত পদার্থ দিয়ে আবরণ তৈরি করে। এটি আপনার ত্বকের কোষগুলোতে চাপ বাড়িয়ে দিতে পারে। ফলে ত্বক সময়ের আগেই বুড়িয়ে যায়।
ফল খান: ত্বকে পুষ্টি জোগাতে প্রচুর পরিমাণে ফল ও সবজি খান। এতে আপনার শরীরে ভিটামিন ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্টের মাত্রা বৃদ্ধি পাবে। মাছের তেলের মতো স্বাস্থ্যকর চর্বি খাওয়া এবং প্রচুর প্রিজারভেটিভযুক্ত প্রক্রিয়াজাত খাবার থেকে দূরে থাকা; স্বাস্থ্যকর ত্বকের জন্য সবচেয়ে প্রয়োজনীয়।
সূত্র: হেলথলাইন, হেলথ শর্টস