বৃহস্পতিবার, ৯ অক্টোবর ২০২৫
Logo

রিজেক্ট হয়েও হাল ছাড়েননি, নাওভির স্বপ্নছোঁয়া অভিনয় যাত্রা

Journalist Name

উত্তরভূমি বার্তাকক্ষ

প্রকাশ: ০৪ জুলাই ২০২৫, ১০:২১পিএম

রিজেক্ট হয়েও হাল ছাড়েননি, নাওভির স্বপ্নছোঁয়া অভিনয় যাত্রা

বার্জার পেইন্টেসের ‘শোবার ঘরটি নীল হোক, আকাশের মতো’, ক্লোজআপ টুথপেস্টের ‘যখনই সুযোগ পাও এগিয়ে যাও কনফিডেন্সের সাথে’ কিংবা বিকাশের ‘পেওনিয়ার থেকে বিকাশে টাকা ট্রান্সফার করো সুপার ফাস্ট’— এই চেনা সংলাপগুলোর পেছনে যে মুখটি ফুটে ওঠে, সে মুখের নাম সাদ নাওভি।

কেবল বিজ্ঞাপন নয়, পর্দায় তার উপস্থিতি আরও বিস্তৃত। ওয়েব সিরিজ ‘কারাগার’-এর তরুণ আলফ্রেড হোন কিংবা বঙ্গ’র ‘বিএনজি’-এর সামীর, সর্বশেষ ঈদে মুক্তিপ্রাপ্ত আলোচিত সিনেমা ‘তাণ্ডব’-এ জয়া আহসানের ভাই ইভন, প্রত্যেকটিতেই নাওভি রেখে গেছেন আলাদা ছাপ।

শুধুই কি বিজ্ঞাপন? না, ‘কারাগার’ এর তরুণ আলফ্রেড, বঙ্গ’র সিরিজ ‘বিএনজি’ এর সামীর হিসেবেও দর্শক তাকে পর্দায় পেয়েছে।

আরেকটু সহজ করে বললে, এবার ঈদে মুক্তিপ্রাপ্ত সবচেয়ে আলোচিত সিনেমা ‘তাণ্ডব’-এও দেখা গেছে তাকে। সিনেমাটিতে জয়া আহসানের চরিত্র যাকে ঘিরে আবর্তিত হয়েছে, অভিনেত্রীর ছোট ভাই সেই ইভন হিসেবে ছিলেন এই নাওভি।

নাওভির বেড়ে ওঠাটাও সিনেমার গল্পে মোড়ানো। বাবা ভীষণ সিনেমাপ্রেমী হওয়ায় একদম ছোটবেলা থেকেই নাওভির দুনিয়াটা যেন ছিল সিনেমাকে ঘিরেই! যদিও ছোটবেলায় এত বুঝতেন না, তবে সিনেমা দেখার পর বিভিন্ন চরিত্রগুলো নিজের মধ্যে ধারণ করে সেভাবে বাসার সবার সামনে অভিনয় করতেন কিংবা একটিভিটিজ করতেন।

বুঝতে শেখার পর সেগুলোই যেন তাকে ঘিরে ধরেছে, যার কারণে মনে স্বপ্ন লালন করতে থাকেন, একদিন তিনিও অভিনয় করবেন। তখনই ঠিক করে ফেলেছিলেন, তার জায়গা অফিসের ডেস্কে নয়, সিনেমার পর্দায়। সেই স্বপ্নের পথ ধরেই শুরু।

সাদ নাওভি বলেন, ‘আমি যখন ক্লাস ওয়ান কিংবা টুতে পড়ি তখন থেকেই আমার সবকিছু যেন সিনেমা ঘিরে ছিল।

এত কিছু তখনও বুঝতাম না। কোনো সিনেমা দেখার পর সেটার মধ্যে যে চরিত্রটা ভালো লাগতো ঠিক সেরকম একটিভিটিজ করতাম। সেই ভালো লাগাটাই রয়ে গেছে। বুঝতে শেখার পর থেকে লক্ষ্য স্থির করেছি শোবিজেই নিজের ক্যারিয়ার গড়ব। এরপর থেকে কাজের সুযোগ খুঁজতে থাকা।

মার্কেটিং নিয়ে গ্র্যাজুয়েশন শেষ করার পর করপোরেটে আমার জন্য সুবর্ণ সুযোগ ছিল, অনেকগুলো কোম্পানি থেকে বেশ ভালো অংকের স্যালারির প্রস্তাবও ছিল কিন্তু আমি সেসব ফিরিয়ে দেই। কারণ ছোটবেলা থেকে আমার বেড়ে উঠা সিনেমা ঘিরে, সেই সিনেমা ইন্ডাস্ট্রিতেই কাজ করব এবং সেটাকে লক্ষ্য করেই এগোতে থাকি।’

২০১৭ সালে বসুন্ধরা টিস্যুর বিজ্ঞাপন দিয়ে শোবিজে যাত্রা শুরু হয় নাওভির, তাও আবার ইন্ডাস্ট্রির সবচেয়ে নামী বিজ্ঞাপন নির্মাতা আদনান আল রাজীবের হাত ধরে। যদিও সহসাই সে সুযোগ পাননি তিনি। একদম প্রথমে এয়ারটেলের বিজ্ঞাপনের জন্য অডিশন দিয়েও দুইবার রিজেক্ট হয়েছেন, কিন্তু হাল ছাড়েননি তিনি। তৃতীয়বার সুযোগ পান আদনান আল রাজীবের পরিচালনায়।

এরপর এয়ারটেল, বার্জার পেইন্টস, বিকাশসহ বহু ব্র্যান্ডের, অর্থাৎ এখন পর্যন্ত ৭০টিরও বেশি বিজ্ঞাপনে বিজ্ঞাপনে কাজ করেন নাওভি। সবচেয়ে মজার বিষয় হলো, যেই এয়ারটেলের বিজ্ঞাপনে তিনি রিজেক্ট হয়েছিলেন সেই এয়ারটেলের বিজ্ঞাপনেই সবচেয়ে বেশি কাজ করেছেন নাওভি, তাও ১৭টিরও বেশি। আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি তার। টেলিভিশন হোক কিংবা সোশ্যাল মিডিয়া; সবখানেই পরিচিত মুখ হয়ে উঠেন নাওভি।

মডেলিং, অভিনয়ের পাশাপাশি তিনি একজন ভয়েজ আর্টিস্টও। অসংখ্য বিজ্ঞাপনে পাওয়া গেছে তার দরাজ কণ্ঠ। তবে এখন নাওভির লক্ষ্য অভিনয়কে ঘিরে। নিজেকে তৈরি করতে চান পারফর্মার হিসেবে। ‘চকলেট বয়’ লুক হলেও নাওভির ইচ্ছা নির্মাতারা তাকে দিয়ে যে কোনো চরিত্রের চ্যালেঞ্জ নিক। ভার্সেটাইল অভিনেতা হিসেবে দর্শকের হৃদয়ে জায়গা করে নিতে চান এই তরুণ তুর্কী। 

নাওভির ভাষ্যে, ‘এখন অভিনয়েই বেশি ফোকাস দিতে চাই। আমি চাই নির্মাতারা বিভিন্ন চরিত্রে আমাকে নিয়ে খেলুক, আমি সেই চ্যালেঞ্জটা নিতে চাই। একজন ভার্সেটাইল অভিনেতা হতে চাই।’

‘তাণ্ডব’-এ অভিনয়ের সময় শাকিব খানের সঙ্গে তার অল্পস্বল্প কথা হয়েছে। তবে যেটুকু সময় তিনি ছিলেন ততক্ষণ অভিনয়ে যেন নিজের মধ্যে আলাদা একটা এনার্জি খুঁজে পেয়েছেন নাওভি।  

বললেন, ‘তাণ্ডব-এ জেলের দৃশ্যটি করেছিলাম শ্রীলংকার বোগাম্বারা কারাগারে। সেটা ওখানকার কয়েকশ বছর আগের একটি জেল। শুটিংয়ের বাইরে শাকিব ভাইয়ের সঙ্গে আমার সেভাবে কোনো আলাপ হয়নি, জাস্ট হাই/হ্যালো। কিন্তু তিনি এমন একজন যাকে সামনাসামনি দেখলে মনে হয় যে, নায়ক। তার মধ্যে একটা বিশেষ ব্যাপার আছে, অরা আছে। তাকে দেখলে একটা গুজবাম্পস তৈরি হয়। সেটে তাকে দেখে অনেক এনার্জি পেতাম। আমি আমার চরিত্রটা যতটুকু ফুটিয়ে তুলতে পেরেছি, সেটা একমাত্র শাকিব ভাইয়ের কারণে। কারণ, আমি সেই এনার্জিটুকু তাকে দেখেই পেয়েছিলাম। তার পর থেকে এখন আমার মধ্যে অভিনয় নিয়ে যে আকাঙ্ক্ষা, সেটা আগের চেয়ে কয়েক গুণ বেড়ে গেছে।’

শাকিবের প্রশংসা শেষে জয়া আহসানের গুণকীর্তন করতেও ছাড়েননি নাওভি। যাকে ছোটবেলা থেকে দেখে আসছেন তার সঙ্গে পর্দায় স্ক্রিন শেয়ার করা যেন অন্যরকম ভালো লাগার। 

নাওভি বলেন, ‘যেই জয়া আপুকে ছোটবেলা থেকে দেখে বড় হয়েছি তাকে সামনাসামনি প্রথম দেখেছি সেদিনই, আমার শুটিংয়ে। গ্রীন রুমে আমি উনাকে সালাম দিয়ে বললাম, আপু আমি আপনার ছোট ভাইয়ের চরিত্রটি করছি। এরপর তিনি ফেইস তার ফেইসের কাছে নিয়ে আয়নার দিকে তাকিয়ে বললেন, তোমারও চোখ ছোট, আমারও; আমাদের ফেইসে মিল আছে। উনি এত তাড়াতাড়ি আমাকে একটা কমফোর্ট জোন তৈরি করে দিবেন, ভাবতেই পারিনি। এরকম আরও অনেক কিছুই আছে। তখন উনার সঙ্গে কাজ করতে গিয়ে আমি একটা প্রশ্নের উত্তর পেলাম যে, এত বছর ধরেও তিনি কেন সবার এত প্রিয়! সেটের সবাইকে এত সহজে আপন করে নেন, যা সত্যি দারুণ।’

শাকিব খান তো রয়েছেনই, এর বাইরে তারকাদের মধ্যে আফরান নিশো এবং শরিফুল রাজকে বেশ পছন্দ নাওভির। কম কাজ কিন্তু সিনেমায় নিজেকে ভিন্ন ভিন্ন চরিত্রে যেভাবে শরিফুল রাজ নিজেকে যেভাবে উপস্থাপন করেছেন সেটা নাওভিকে অনেকটাই অনুপ্রেরণা দেয়। এর বাইরে মোশাররফ করিম ও চঞ্চল চৌধুরীও রয়েছেন তার পছন্দের তালিকায়।