রবিবার, ৯ নভেম্বর ২০২৫
Logo

বায়ুদূষণ কিভাবে ত্বকের ক্ষতি করে, জানালেন ডার্মাটোলজিস্ট

Journalist Name

উত্তরভূমি বার্তাকক্ষ

প্রকাশ: ২৬ অক্টোবর ২০২৫, ০৯:২৮পিএম

বায়ুদূষণ কিভাবে ত্বকের ক্ষতি করে, জানালেন ডার্মাটোলজিস্ট

অনিয়মিত খাবার বা জিম মিস করার প্রভাব কিছুটা সামাল দেওয়া যায়, কিন্তু দূষিত বাতাসের প্রভাব থেকে রক্ষা পাওয়া প্রায় অসম্ভব। দূষণ শুধু ফুসফুসে নয়, ধীরে ধীরে ত্বকেও তার ছাপ ফেলে। এই দূষণ উজ্জ্বলতা নষ্ট করে, বয়সের ছাপ ত্বরান্বিত করে এবং ত্বকের স্বাভাবিক প্রতিরোধ ক্ষমতা দুর্বল করে দেয়।

ত্বকের সবচেয়ে বড় শত্রু এখন দূষণ

চর্মরোগ বিশেষজ্ঞ ডা. রশ্মি শর্মা বলেন, ‘বর্তমানে বায়ুদূষণ ত্বকের অন্যতম বড় পরিবেশগত শত্রু।

’ বায়ুতে থাকা সূক্ষ্ম কণিকা, নাইট্রোজেন ডাই-অক্সাইড ও ওজোন ত্বকে প্রদাহ, শুষ্কতা ও আগাম বার্ধক্য ডেকে আনে। অনেক সময় এসব কণিকা সূর্যালোকের ক্ষতির চেয়েও দ্রুত ক্ষতি করতে পারে।

কিভাবে দূষণ ত্বকের প্রাকৃতিক সুরক্ষা ভেঙে দেয়

ত্বকের বাইরের স্তর স্ট্রাটাম কর্নিয়াম এক ধরনের প্রাকৃতিক বর্মের মতো কাজ করে, যা ভেতরের আর্দ্রতা ধরে রাখে এবং বাইরের দূষণ আটকায়। কিন্তু দূষিত বাতাসে এই বর্মে ফাটল ধরে।

সূক্ষ্ম কণাগুলো ত্বকে লেগে থেকে রিঅ্যাক্টিভ অক্সিজেন স্পেসাইজ নামের অস্থিতিশীল অণু তৈরি করে, যা ত্বকের প্রোটিন ও লিপিড নষ্ট করে দেয়। ডা. শর্মার মতে, এই অক্সিডেটিভ স্ট্রেস ত্বকের প্রাকৃতিক অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট প্রতিরক্ষা দুর্বল করে দেয়। যার ফলে ত্বক শুষ্ক, সংবেদনশীল ও আর্দ্রতাহীন হয়ে পড়ে।

ফলে ধুলা, ব্যাকটেরিয়া বা অন্যান্য অ্যালার্জেন সহজেই ত্বকের ভেতর প্রবেশ করতে পারে—ত্বক লালচে, চুলকানিযুক্ত ও সংক্রমণপ্রবণ হয়ে ওঠে।

দূষণ কিভাবে বয়স বাড়ায়

দূষণের ক্ষতি কেবল বাইরের নয়, গভীর স্তরেও প্রভাব ফেলে। বারবার দূষণের সংস্পর্শে ত্বকে ইনফ্লেমেজিং নামে একধরনের নিরব প্রদাহ শুরু হয়। ত্বকের কোষে থাকা এএইচআর রিসেপ্টর সক্রিয় হয়ে আইএল-১ ও টিএনএফ-এর মতো প্রদাহজনিত রাসায়নিক নিঃসরণ করে। সময়ের সঙ্গে এই প্রদাহ কোলাজেন ও ইলাস্টিন ভেঙে দেয়। ফলে ত্বক হারায় দৃঢ়তা ও মসৃণতা।

ডা. শর্মা বলেন, এসব দূষণের ফলে চেহারায় দৃশ্যমান হয় বার্ধক্য। দেখা দেয় ত্বক ঝুলে যাওয়া, বলিরেখা ও অনিয়মিত পিগমেন্টেশন।

সূর্য আর বায়ুদূষণ : একসঙ্গে আরো ক্ষতিকর

সূর্যের ইউভি রশ্মি ত্বকের ডিএনএ ক্ষতিগ্রস্ত করে, আর বায়ুদূষণের কণাগুলো ত্বকের ওপরিভাগে লেগে সেই ক্ষতি আরো বাড়িয়ে দেয়। এই দ্বৈত আক্রমণেই দেখা দেয় ফটোএজিং অর্থাৎ কালচে দাগ, নিস্তেজ ভাব ও অসম ত্বকের রং। এর সঙ্গে যুক্ত হয় ত্বকের মাইক্রোবায়োমের ভারসাম্যহীনতা, ফলে ত্বক হয়ে ওঠে রুক্ষ, ব্রণপ্রবণ ও চরম শুষ্ক।

দূষণ থেকে ত্বক বাঁচানোর উপায়

ডা. শর্মার পরামর্শ, বাতাস নিয়ন্ত্রণ করা না গেলেও নিজের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা শক্ত করা যায়।

সঠিকভাবে পরিষ্কার করুন : দিনে দুই বার হালকা ফেসওয়াশ দিয়ে মুখ পরিষ্কার করুন। এটি দূষণের কণিকা ও মেকআপের অবশিষ্টাংশ সরাবে। তবে ত্বকের প্রাকৃতিক তেল নষ্ট করবে না।

অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট ব্যবহার : ভিটামিন সি, ভিটামিন ই বা গ্রিন টি এক্সট্র্যাক্টযুক্ত স্কিনকেয়ার পণ্য অক্সিডেটিভ স্ট্রেস কমাতে সাহায্য করে।

ত্বকের বর্ম মেরামত : সেরামাইড, নিয়াসিনামাইড ও হায়ালুরোনিক এসিডযুক্ত ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করুন।

সানস্ক্রিন : দূষণ ও রোদ—দুটির বিরুদ্ধে সানস্ক্রিনই সবচেয়ে কার্যকর প্রতিরক্ষা।

ভেতর থেকে হাইড্রেশন : পর্যাপ্ত পানি পান করুন, পর্যাপ্ত ঘুমান এবং ভিটামিন ও অ্যান্টি-অক্সিডেন্টসমৃদ্ধ খাবার (যেমন বেরি, শাকসবজি, বাদাম) খান।