শনিবার, ৮ নভেম্বর ২০২৫
Logo

লিভার ভালো রাখতে সাহায্য করবে কলা, খেতে হবে যেভাবে

Journalist Name

উত্তরভূমি বার্তাকক্ষ

প্রকাশ: ২৮ অক্টোবর ২০২৫, ০৭:১০পিএম

লিভার ভালো রাখতে সাহায্য করবে কলা, খেতে হবে যেভাবে

কলা খাওয়া একদমই সহজ। খোসাটুকু ছাড়িয়ে নিলেই তা খাওয়ার জন্য প্রস্তুত। তবে কেউ কেউ আবার টুকরো করে কেটে মিশিয়ে নেন ফ্রুট সালাদ, চিড়া-দইয়ের ফলার কিংবা রায়তায়। ওপরে ছড়িয়ে দেন ভাজা জিরার গুঁড়ো বা চাট মসলা।

কাঁচা কলা সিদ্ধ করে তাতে লবণ তেল ছড়িয়ে কিংবা কোফতা বানিয়েও খাওয়ার চল রয়েছে। কিন্তু কলার ওপরে কখনো গোলমরিচ ছড়িয়ে খেয়ে দেখেছেন?

মিষ্টি স্বাদের সুস্বাদু এই ফল একদিকে যেমন পুষ্টিগুণে ভরপুর, তেমনই সহজলভ্য। এর বাইরে কলার আরো গুণ আছে। যার মধ্যে একটি হচ্ছে লিভারকে যতেœ রাখা।

আর তার জন্যই কলা খাওয়ার আগে তাতে সামান্য গোলমরিচ ছড়িয়ে খেতে বলছেন পুষ্টিবিদরা। কিন্তু কেন? তাতে ঠিক কিভাবে উপকৃত হতে পারে লিভার? চলুন, জেনে নেওয়া যাক—

গোলমরিচের ভূমিকা

তার আগে জানা দরকার কলার কোন কোন পুষ্টিগুণ লিভারের জন্য উপকারী। পুষ্টিবিদরা বলছেন, কলা হজম করা সহজ। তা ছাড়া তাতে রয়েছে ভরপুর পটাশিয়াম, যা রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করে।

আছে ভিটামিন বি৬, ভিটামিন সি, ডোপামিন নামের অ্যান্টি-অক্সিড্যান্ট, যা লিভারে জমা দূষিত পদার্থ বের করে দেয়। কাঁচাকলার রেজিস্ট্যান্ট স্টার্চ লিভারে ফ্যাট জমতে দেয় না।

কলায় থাকা সল্যুবল ফাইবার পেকটিন অন্ত্রের উপকারী ব্যাক্টেরিয়াগুলোকে সুস্থ রাখে। এ ছাড়া কলা শরীরের অতিরিক্ত প্রদাহও কমাতে পারে। সব গুণই লিভার ভালো রাখার জন্য জরুরি।

আর এসব গুণ আরো কয়েক গুণ বেড়ে যেতে পারে যদি কলার সঙ্গে গোলমরিচ মিশিয়ে খাওয়া যায়।

কেন লিভার নিয়ে চিন্তা করা জরুরি

পুষ্টিবিদরা বলছেন, এই যুগে যেভাবে আমাদের নিত্যদিনের খাওয়াদাওয়ার রুটিনে নানা ধরনের প্রক্রিয়াজাত, প্যাকেটজাত খাবার, বাইরের তেলে ভাজা বা মসলাদার খাবার ও ফাস্টফুড ঢুকে পড়েছে, তাতে লিভারকেও তার কাজে সাহায্য করার জন্য কিছু দেওয়া দরকার। আর এসব দূষিত পদার্থ লিভার একা দূর করতে পারছে না বলেই ফ্যাটি লিভারে আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে।

ফ্যাটি লিভার বিশেষত নন অ্যালকোহলিক ফ্যাটি লিভার বা এনএএফএলডি (যে ফ্যাটি লিভার অ্যালকোহল পান করার কারণে হয়নি)-এর সমস্যা ক্রমেই বাড়ছে দেশে। এই একই রোগের সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে কমবয়সিদের মধ্যেও।

বিশেষজ্ঞরা জানাচ্ছেন, প্রতি তিনজন মানুষের লিভার পরীক্ষা করলে দেখা যাবে, তার মধ্যে অন্তত এক জনের ফ্যাটি লিভার ধরা পড়ছে। অথচ তারা হয়তো নিজেরা এখনো জানেন না রোগের কথা। যে লিভার শরীর থেকে যাবতীয় বিষাক্ত পদার্থ টেনে বের করে বলে শরীর সুস্থ থাকতে পারে, সেটিই যদি অল্প বয়সে ক্ষতিগ্রস্ত হয় তা হলে তো বিপদ।

কলা+গোলমরিচ

কলার সঙ্গে গোলমরিচ মিশিয়ে খেলে যে উপকার মিলতে পারে, সে কথা বলছে একটি গবেষণাপত্রও। সেখানে বলা হচ্ছে, গোলমরিচে রয়েছে এক ধরনের একটি জৈব সক্রিয় উপাদান পিপেরিন। যা নন অ্যালকোহলিক ফ্যাটি লিভারের সমস্যা কমাতে সাহায্য করতে পারে।

পুষ্টিবিদরা বলছেন, বহু গবেষণায় দেখা গেছে, গোলমরিচে থাকা পিপেরিন শরীরে থাকা সেসব ফ্রি র‌্যাডিক্যাল কমাতে পারে, যা শরীরে থেকে গেলে লিভারের কোষের ক্ষতি করে।

এ ছাড়া নন অ্যালকোহলিক ফ্যাটি লিভার নিয়ন্ত্রণের জন্য যে প্রদাহ কমানো জরুরি, তাতেও গোলমরিচে থাকা পিপেরিন সাহায্য করে। পুষ্টিবিদরা জানাচ্ছেন, সিওয়াইপি২ই১, গ্লুটাথিয়োন এস ট্রান্সফেরাসের মতো বেশ কিছু এনজাইম ক্ষরণেও সাহায্য করে পিপেরিন। যা লিভারকে টক্সিন বা বিষাক্ত পদার্থ থেকে মুক্ত করতে পারে।

দেখা যাচ্ছে, কলা ও গোলমরিচ দুটি উপাদানই আলাদা আলাদাভাবে লিভারের উপকারে লাগে। তবে দুটি খাবার যদি এক সঙ্গে খাওয়া যায়, তবে সেই উপকার আরো অনেকটা বেড়ে যায়।

পুষ্টিবিদের পরামর্শ, কলা একটি অত্যন্ত সহজলভ্য ফল। গোলমরিচও প্রায় সব রান্নাঘরেই পাওয়া যায়। তাই প্রতি দিন সকালে যদি কেউ একটি করে কলা গোলমরিচ ছড়িয়ে খেতে পারেন, তবে তা তাদের লিভারের জন্য ভালো বলেই প্রমাণিত হবে।

সতর্কতা

যদিও পুষ্টিবিদরা বলছেন, এই উপশম সবার জন্য নয়। কেউ যদি লিভারের রোগী হওয়ার পাশাপাশি ডায়াবেটিসেরও সমস্যায় ভোগেন তবে, তার এই টোটকা এড়িয়ে চলাই ভালো। যাদের আলসারের সমস্যা রয়েছে, তাদেরও গোলমরিচ বেশি খাওয়া উচিত নয়।

সূত্র: আনন্দবাজার ডট কম