জুতো দেখতে যত সাধারণ, প্রভাব কিন্তু ততটাই গভীর। ঠিকভাবে নির্বাচন না করলে এই প্রতিদিনের প্রয়োজনীয় জিনিসটাই উল্টো আমাদের শরীরের ওপর নীরব নির্যাতন চালাতে পারে। অনেক আরামদায়ক মনে হওয়া জুতোও দীর্ঘমেয়াদে নষ্ট করে দিতে পারে শরীরের স্বাভাবিক ভঙ্গি। ভুল মাপের জুতো থেকে শুরু করে দৈনন্দিন ব্যবহারের সাধারণ জুতো কখনো পিঠ, কোমর বা হাঁটুর ব্যথার কারণ হতে পারে।
তাই জুতো বাছাইয়ের ক্ষেত্রে সতর্কতা অপরিহার্য। আমরা অনেক সময় স্থান-কাল অনুযায়ী জুতো বদলাই। বাজার, অফিস, এমনকি টয়লেটের জন্যও আলাদা জুতো ব্যবহার করি। কিন্তু জুতোর উপযুক্ততা বা মাপ নিয়ে সচেতন হই না।
গবেষণা বলছে, এই অসতর্কতাই শরীরের গঠনে মারাত্মক প্রভাব ফেলে।
নতুন জুতো পরতে সামান্য অস্বস্তি লাগলেও কয়েকদিন পরে ঠিক হয়ে যাবে ভেবে কিনে নেওয়াই সবচেয়ে বড় ভুল। এই ছোট্ট অস্বস্তি থেকেই হতে পারে বুনিয়ন, যেখানে পায়ের আঙুলের গোড়ার হাড় বেরিয়ে আসে। এমনকি নখেরও ক্ষতি হয়।
বিশেষজ্ঞদের মতে, পা পুরো শরীরের ভিত্তি। ভুল মাপের জুতো পায়ের স্বাভাবিক ভারসাম্য নষ্ট করে ক্লান্তি বাড়ায় এবং সেই প্রভাব ধীরে ধীরে গোটা শরীরে ছড়িয়ে পড়ে।
ব্যথা কিভাবে শুরু হয়
ফিজিওথেরাপিস্টদের মতে, হাঁটার সময় পায়ের গঠন পরিবর্তিত হয়। প্রথমে গোড়ালি মাটিতে লাগে তারপর পা সামনের দিকে গড়ায়, শেষে আঙুল ঠেলে দেয় শরীরকে সামনে। ভুল জুতো পরলে এই প্রাকৃতিক প্রক্রিয়ায় ব্যাঘাত ঘটে।
সাধারণভাবে মাটিতে পা ফেলার প্রক্রিয়াকে বলে প্রোনেশন। চওড়া পায়ে সরু জুতো পরলে পা পুরোপুরি মাটিতে বসে না। ফলে ভারসাম্য নষ্ট হয়, পিঠ ও কোমরে বাড়তি চাপ পড়ে এবং সময়ের সঙ্গে সঙ্গে তৈরি হয় দীর্ঘস্থায়ী ব্যথা ও হাঁটার ত্রুটি।
কিভাবে বুঝবেন, জুতোই ব্যথার কারণ
জুতোর ক্ষয়ে যাওয়া অংশই অনেক সময় সব বলে দেয়। অতিরিক্ত প্রোনেশনে জুতোর ভেতরের দিক ও গোড়ালি বেশি ক্ষয়ে যায়। এতে পা ভেতরের দিকে হেলে যায়, পায়ের টিস্যুতে প্রদাহ হয় এবং ধীরে ধীরে হাঁটু, কোমর ও পিঠে ব্যথা দেখা দেয়। এসব লক্ষণ দেখলে বুঝতে হবে, সমস্যার মূল আপনার জুতো।
যেভাবে সঠিক জুতো বেছে নেবেন
১। পায়ের গঠন ও নড়াচড়ার সঙ্গে মানানসই জুতো বেছে নিন।
২। ফ্ল্যাট জুতো শক্ত মিডসোলযুক্ত হলে বেশি আরাম দেয়।
৩। উঁচু খিলানযুক্ত পা-এর জন্য দরকার বাড়তি কুশনিং।
৪। চওড়া পায়ের জন্য প্রশস্ত টো-বক্স, সরু পায়ের জন্য টাইট-ফিট জুতো নিন।
৫। সবচেয়ে ভালো হয় দিনের শেষে জুতো কেনা, কারণ তখন পা ফোলা থাকে, এই অবস্থায় ফিট মানে আরাম নিশ্চিত।
৬। নতুন জুতো পরে কিছুক্ষণ হাঁটুন, কেমন লাগে দেখুন।
৭। নিয়মিত জুতোর সোল, কুশন ও ফিটিং পরীক্ষা করুন।
আমাদের শরীরের প্রতিটি অঙ্গ একে অপরের সঙ্গে নিবিড়ভাবে যুক্ত। তাই পায়ের আরামের সঙ্গে শরীরের সামগ্রিক স্বাস্থ্যের সম্পর্ক অটুট। সঠিক জুতোই হতে পারে ব্যথামুক্ত চলার প্রথম পদক্ষেপ।