শীতকাল মানেই বাজারে টইটম্বুর সবুজ টসটসে জলপাই। টক-মিষ্টি স্বাদের এই ফল দিয়ে তৈরি আচার শুধু মুখরোচকই নয়, এটি ভিটামিন সি-সমৃদ্ধ একটি স্বাস্থ্যকর খাবারও। আজ থাকছে জলপাইয়ের ছয়টি ভিন্ন স্বাদের আচার—টক, মিষ্টি, ঝাল, ভর্তা
টাইপ ও শুকনা—যা বাড়িতেই সহজে বানানো যায়
টক ঝাল জলপাই আচার
উপকরণ
জলপাই – ১ কেজি, সরিষার তেল– ১ কাপ, শুকনো মরিচ গুড়া– ২ টেবিলচামচ, সরিষা বাটা – ২ টেবিলচামচ, মেথি – ১ চা-চামচ, হলুদ গুঁড়া– ১ চা-চামচ, লবণ– স্বাদমতো ও ভিনেগার– ১/২ কাপ
প্রস্তুত প্রণালি
জলপাই ভালো করে ধুয়ে আধা সেদ্ধ করে নিন। পানি ঝরিয়ে সূর্যে ২–৩ ঘণ্টা শুকাতে হবে। কড়াইয়ে তেল গরম করে মেথি ফোড়ন এবং সরিষা বাটা, মরিচ গুঁড়া, হলুদ ও লবণ দিয়ে নেড়ে মশলা ভালোভাবে ভেজে নিতে হবে। মশলার সঙ্গে জলপাই মিশিয়ে কিছুক্ষণ নেড়েচেড়ে শেষে ভিনেগার ঢেলে ঠান্ডা হলে কাচের বোতলে ভরে রাখুন।
মিষ্টি জলপাই আচার
উপকরণ
জলপাই – ১ কেজি, চিনি – ৫০০ গ্রাম, ভিনেগার – ১/২ কাপ, লবণ – ১ চা-চামচ ও দারচিনি ও এলাচ – অল্প পরিমাণ।
প্রস্তুত প্রণালি
জলপাই কেটে আধা সেদ্ধ করে নিন। চিনি ও আধা কাপ পানি দিয়ে সিরা তৈরি করুন। সিরা ঘন হলে তাতে জলপাই যোগ করে দারচিনি, এলাচ ও লবণ মিশিয়ে নিন। চুলা থেকে নামানোর আগে ভিনেগার মিশিয়ে নিন। ঠান্ডা হলে কাচের বোতলে ভরে সংরক্ষণ করুন।
শুকনা ঝাল জলপাই আচার
উপকরণ
জলপাই – ১ কেজি, শুকনো মরিচ গুঁড়া – ৩ টেবিলচামচ, সরিষা গুঁড়া – ১ টেবিলচামচ, মেথি গুঁড়া– ১ চা-চামচ, হলুদ গুঁড়া– ১ চা-চামচ, লবণ– ২ টেবিলচামচ ও সরিষার তেল– ১ কাপ।
প্রস্তুত প্রণালি
জলপাই সেদ্ধ না করে কেটে দুই দিন কড়া রোদে শুকিয়ে নিন। সব মশলা ও তেল একসাথে মিশিয়ে শুকনো জলপাইয়ে মাখিয়ে টানা কয়েকদিন রোদে রেখে নেড়ে দিন, তারপর বোতলে সংরক্ষণ করুন।
সবজি দিয়ে জলপাইয়ের আচার
উপকরণ
জলপাই ৫০০ গ্রাম, গাজর ১০০ গ্রাম, বেগুন ১০০ গ্রাম, ফুলকপি ১টি, রসুনের কোয়া ১ কাপ, তেজপাতা ২ পিস, সরিষার তেল ২ কাপ, হলুদ গুঁড়া ১ চা চামচ, মরিচ গুঁড়া ১ চা চামচ, ধনে গুঁড়া ১ চা চামচ, সিরকা ১/৪ কাপ, বিট লবণ ১ চা চামচ, চাট মসলা ১ চা চামচ, চিনি ১/২ কাপ, পাঁচফোড়ন ২ টেবিল চামচ
প্রস্তুত প্রণালি
জলপাই ভালো করে ধুয়ে নিন এবং রোদে শুকিয়ে নিন। গাজর ও বেগুন কেটে নিন। ফুলকপি ছোট ছোট টুকরো করে নিন। সবজিগুলো হালকা ভাপিয়ে বা সেদ্ধ করে নিন। একটি প্যানে সরিষার তেল গরম করে পাঁচফোড়ন ও তেজপাতা দিয়ে দিন। এরপর রসুন কুচি এবং সবজি দিয়ে কিছুক্ষণ ভেজে নিন। এবার হলুদ, মরিচ, ধনে গুঁড়া, বিট লবণ, চাট মসলা ও চিনি দিয়ে ভালো করে মিশিয়ে নিন। সবজির সাথে জলপাই যোগ করুন এবং একসাথে কষিয়ে নিন। সব শেষে সিরকা দিয়ে ভালোভাবে মিশিয়ে নিন। আচার ঠান্ডা হলে একটি পরিষ্কার, শুকনো কাঁচের বয়ামে ভরে রাখুন। এটি রোদে না দিয়েও সংরক্ষণ করা যায়।
জলপাই ভর্তা আচার
উপকরণ
সেদ্ধ জলপাই – ৫০০ গ্রাম, শুকনো মরিচ ভাজা– ৫–৬টি, রসুন বাটা–১ টেবিলচামচ, লবণ – স্বাদমতো ও সরিষার তেল– ৩ টেবিল চামচ।
প্রস্তুত প্রণালি
জলপাইয়ের বিচি ফেলে নরম করে মেখে নিন। মরিচ, রসুন, লবণ ও তেল মিশিয়ে ভর্তার মতো করে নিন। কাচের বোতলে ভরে ১–২ দিন পর থেকে খাওয়া যাবে জলপাইয়ের ভর্তা। রেফ্রিজারেটরে রাখলে ১ সপ্তাহ ভালো থাকে।
লেবু-জলপাই আচার
উপকরণ
জলপাই– ৫০০ গ্রাম, লেবু– ৩টি (টুকরা করা), মরিচ গুঁড়া– ১ টেবিলচামচ, সরিষা বাটা–১ টেবিলচামচ, লবণ–১ টেবিলচামচ ও সরিষার তেল–আধা কাপ
প্রস্তুত প্রণালি
জলপাই সেদ্ধ করে পানি ঝরিয়ে নিন। লেবু ও মশলা একসাথে মিশিয়ে তেল গরম করে ফোড়ন দিন। সব একসাথে মিশিয়ে রোদে ২ দিন রাখুন। পরে কাচের বোতলে ভরে রাখলে এক মাস পর্যন্ত ভালো থাকবে।
আচার সংরক্ষণের পদ্ধতি
কাচের বোতল বা জার ভালোভাবে ফুটানো গরম পানিতে জীবাণুমুক্ত করে শুকিয়ে নিন। আচার ঢালার আগে বোতল সম্পূর্ণ শুকনো থাকতে হবে।
ঠান্ডা ও শুষ্ক স্থানে রাখো। সূর্যের আলোয় মাঝে মাঝে বোতল ১–২ ঘণ্টা রেখে দিলে আচার দীর্ঘদিন ভালো থাকে।
বাজারের কেমিক্যালযুক্ত আচারের চেয়ে ঘরে তৈরি জলপাই আচার অনেক নিরাপদ ও স্বাদে অনন্য। আজই সময় করে বানিয়ে ফেলো নিজের পছন্দের ধরনটি— প্রতিটি কামড়ে টক, ঝাল, মিষ্টির পরিপূর্ণ আনন্দ!
আচার খাওয়ার উপকারিতা
হজমে সহায়তা করে ক্ষুধা বাড়ায়
অ্যান্টিঅক্সিডেন্টে ভরপুর
ঠান্ডা-কাশি প্রতিরোধে কার্যকর
ত্বক ও চুলের জন্য উপকারী