শীত পড়তে শুরু করেছে। শহরের দিকে এখনো তেমনভাবে দেখা না গেলেও গ্রামের দিকে জানান দিচ্ছে শীতের আগমনী বার্তা। আর এটাই যেন শরীর খারাপের মৌসুম। শীতের শুরু মানেই ধোঁয়াশায় ঢাকবে চারদিক।
সকালে হাঁটতে বের হলে চোখ জ্বালা, গলা শুকিয়ে যাওয়া, কাশির মতো সমস্যা তো রয়েছেই।
বাতাসের এই বিষ শুধু ফুসফুস নয়, প্রভাব ফেলে হার্ট, ত্বক, এমনকি রক্তে শর্করার ওপরও। আশপাশের পরিস্থিতি চট করে বদলানো না গেলেও, শরীরকে সঠিক ইমিউনিটি দেওয়া সম্ভব। তাও প্রতিদিনের ডায়েটের মাধ্যমেই।
পুষ্টিবিদদের মতে, প্রতিদিন কী কী খাচ্ছেন, তাই হতে পারে দূষণ থেকে সুরক্ষার প্রথম ঢাল।
অ্যান্টি-অক্সিডেন্টই রক্ষাকবচ
বায়ুদূষণ শরীরে ‘অক্সিডেটিভ স্ট্রেস’ তৈরি করে। এটি এমন এক প্রক্রিয়া, যা কোষের ভেতরে অস্থিতিশীল রাসায়নিক তৈরি করে। তা ধীরে ধীরে শরীরের ক্ষতি করতে শুরু করে।
অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ খাবারই একমাত্র এই ক্ষতি ঠেকাতে সাহায্য করে। যেসব খাবারে পাওয়া যেতে পারে—
সবুজ শাক-সবজি : পালং, মেথি, সজনে, কারি পাতা, বাঁধাকপি, ব্রকোলিতে থাকে প্রচুর ভিটামিন সি ও ই, যা লিভারের ডিটক্স প্রক্রিয়ায় সাহায্য করে।
ভিটামিন সি–সমৃদ্ধ ফল : কমলালেবু, আমলকী, পেয়ারা ফুসফুসের আবরণকে রক্ষা করে ও শরীরের প্রাকৃতিক অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট পুনরুদ্ধারে সাহায্য করে।
ওমেগা-৩ ফ্যাট : মাছ, আখরোট, তিসি ও চিয়া সিডসে থাকা ওমেগা-৩ দূষণের প্রভাবে হওয়া ইনফ্লেমেশন কমায় ও হার্টকে সুরক্ষিত রাখে।
বাদাম ও বীজ : কাজু, সূর্যমুখী ও কুমড়ার বীজে থাকে ভিটামিন ই, জিঙ্ক ও সেলেনিয়াম, যা ত্বক ও ফুসফুসকে রক্ষা করে।
পুষ্টিবিদরা বলছেন, রোগ প্রতিরোধক্ষমতা গড়ে তুলতে একটি সহজ মিশ্রণ ব্যবহার করা যেতে পারে। যেমন, দিনে ১০০-২০০ মিলিগ্রাম ভিটামিন সি, ১০-১৫ মিলিগ্রাম ভিটামিন ই এবং ১ গ্রাম ওমেগা-৩ দূষণের ক্ষতি কমাতে কার্যকর হতে পারে।
স্মুদিতে এক চা-চামচ ফ্ল্যাক্সসিডস পাউডার হোক, স্টার ফ্রায়েড সবজিতে একটুখানি তিল ছড়িয়ে নেওয়া বা বাঁধাকপি হালকা টস করে তাতে একটু হলুদ গুঁড়া, লেবুর রস মিশিয়ে নিতে পারেন। ছোট ছোট পরিবর্তনেই বড় প্রভাব পড়বে শরীরে।
গলার সংক্রমণ থেকে সুরক্ষার উপায়
গলা, নাক ও মুখই প্রথম দূষণের কবলে পড়ে। এদের সঠিক খেয়াল রাখতে পারলে সংক্রমণের ঝুঁকি অনেক কমে।
আদা ও হলুদ : প্রাকৃতিক উপায়ে ইনফ্লেমেশন কমায়। চা, স্যুপ বা ডালে ব্যবহার করুন।
মধু : এক চামচ কাঁচা মধু বা গলার শুষ্কতা কমায় ও ব্যাকটেরিয়া রোধ করে।
দই ও প্রোবায়োটিকস : সুস্থ অন্ত্র মানেই শক্তিশালী রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা। নিয়মিত দই বা প্রো-বায়োটিক পানীয় ডায়েটে রাখুন।
এড়িয়ে চলুন অতিরিক্ত কফি, ঝাল বা ঠাণ্ডা খাবার। তার পরিবর্তে গরম পানি বা আদা-মুলেঠি ভেষজ পানীয় খেতে পারেন।
সকালের জন্য বিশেষ টিপস
গরম পানি ও মধু দিয়ে দিন শুরু করুন। সঙ্গে ফ্ল্যাক্সসিড দেওয়া ওটস বা দালিয়া গলার খেয়াল রাখবে, শরীরকেও শক্তি দেবে। শীতের দিনে উষ্ণ পানীয় শুধু আরাম দেয় না, রোগপ্রতিরোধও বাড়ায়।
হলুদ মেশানো দুধ : হলুদ, গোলমরিচ, দারচিনি ও দুধের মিশ্রণ ইনফ্লেমেশন কমায়, ঘুমের আগে খাওয়ায়ই আদর্শ।
তুলসী-আদা চা : প্রাকৃতিকভাবে সর্দি-কাশি কমায়।
কেশর-বদাম দুধ : ভিটামিন ই ও হেলদি ফ্যাটে ভরপুর, ত্বকের যত্ন রাখে ও শক্তি বাড়ায়।
জোয়ান বা জিরা পানি : হজমে সাহায্য করে।
আপেল-দারচিনি ইনফিউশন : ডেজার্ট হিসেবে দারুণ ও অ্যান্টি-অক্সিডেন্টসমৃদ্ধ বিকল্প।
ছোট টিপস
হলুদের কারকিউমিন শোষণ বাড়ে গোলমরিচের পাইপেরিনের সঙ্গে। আদায় থাকা জিঞ্জারল প্রদাহ কমায়, বাদাম ও বীজে থাকা ভিটামিন ই ও জিংক ইমিউনিটি মজবুত করে। শীত, ধোঁয়াশা, ঠাণ্ডা বাতাস—সব কিছুর মাঝেও রঙিন, উষ্ণ খাবারই হোক আপনার সুস্বাস্থ্যের সঙ্গী।